নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অন্যতম হোতা শামীম ওসমান ও অন্যান্যদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি বিশাল ও আধুনিক অপকর্মের ঘটনা যেন ইতিহাস হয়ে থাকবে।
শামীম ওসমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিত্য নতুন অপরাধ যেন নিত্যকার কর্মকাণ্ডে পরিনত হয়েছিলো।
সর্বত্র যেন অপরাধের চিহ্ন। গডফাদার উপাধি মাথায় নিয়ে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাতে পালানোর পর ফের ২০০৮ সালে আবির্ভাব ঘটে সেই গডফাদার শামীম ওসমানের। এর টানা ১৫ বছর চালিয়েছে তান্ডব আর নগ্ন কর্মকাণ্ড।
২০১১ সালের ১৮ জুন বাসভাড়া বৃদ্ধি ও এ প্রেক্ষিতে নারায়াণগঞ্জে ২০ জুন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের ডাকা অর্ধদিবস হরতালের বিষয়টি নিয়ে এ বৈঠক আয়োজন করা হলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সকল গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শামীম ওসমান নিজে এমপি না হয়েও তৎকালীন (এমপি) সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীর উপর নগ্ন হামলা করে প্রকাশ্যেই ।
শামীম ওসমানের ওই নগ্ন আচরণের চিত্র উপস্থিত অসংখ্য সাংবাদিক ধারণ করলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের দরজা বন্ধ করে সকল সাংবাদিকদের ক্যামেরা জব্দ করে মেমোরি কার্ড খুলে রেখে আবারো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে শামীম ওসমান ও তার পেটোয়া বাহিনী এবং কথিত বিশেষ পেশার নামধারী কয়েকজন দালাল।
হাতেগোনা শামীম ওসমানের কয়েকজন চিহ্নিত দালাল ছাত্রলীগের মতোই নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক তান্ডব চালায় নানা কারণে নানা পন্থায়।
এই দালাল চক্রই পুরো আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৫ বছর প্রকৃত সাংবাদিকতার অন্তরায় হয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ।
দীর্ঘদিন পর আবার আজ (২৬ অক্টোবর) শনিবার যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম বাস ভাড়া কমানোর দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করলেও ওই দিনের শামীম ওসমানের নগ্ন কর্মকান্ডের কথা ভুলে যায় ।
বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শামীম ওসমানের এমন নগ্নতার কারণে ই মেধাবী ছাত্র তানভীর ত্বকী কে হত্যা করা হয় বলেও অভিযোগ উঠে ।
২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর ওসমান পরিবারের অত্যাচারের মাত্রা ছিলো জঘন্য ।
আর নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছিলো ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রিত । সেই ছাত্রলীগ বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন । ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর দাপিয়ে বেড়িয়েছে জেলাজুড়ে।
শহরে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, জবর দখল সহ ভিন্নমতের উপর দমন পীড়ন চালিয়েছে ছাত্রলীগ। যদিও এই শহরে আওয়ামী লীগ বা যুবলীগ নেতাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উপর হামলা চালাতে দেখা যায়নি।
কিন্তু ছাত্রলীগ বছরের পর বছর এসব অপকর্ম করে গেছে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা দেয়ার পর স্বস্থি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
ছাত্রলীগ এই শহরে বিএনপি, জামায়াত, বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর হামলার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আয়োজিত কর্মসূচীতেও হামলা চালিয়েছে। কারণ একটাই, তারা আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত নন। কেবল এই অপরাধের কারনে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে ছাত্রলীগ। নেপথ্যে সহযোগীতা করেছে গডফাদার শামীম ওসমান। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর প্রভাব খাটিয়ে এসব ঘটনায় কোন আইনি ব্যবস্থা নিতে দেয়নি শামীম।
নানান ভাবে ভিন্নমত দমন করে এবং নির্যাতন চালিয়েও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের ভীতি ছিলো গণমাধ্যম নিয়ে। আর তাই বিভিন্ন ভাবে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার কাজ অব্যহত ছিলো ছাত্রলীগের। মামলা, হামলা, সাইবার আক্রমন এমনকি মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত।
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের বিষয়ে সংবাদ তুলে ধরার কারনে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর আটকে বেধড়ক নির্যাতন করা হয়েছে প্রেস নারায়ণগঞ্জ ও যুগের চিন্তার সাংবাদিককে। কোন কোন সাংবাদিককে একাধিকবার নির্যাতনও করেছে মহানগর ছাত্রলীগ তথা রিয়াদ বাহিনী। এছাড়া ছাত্রদল নেতার উপর হামলার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানেও দুজন সাংবাদিককে হেনস্থা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শুধু তাই নয়, ‘ছাত্রদল নেতাকে মারধরের সংবাদ প্রকাশ করা হলে সাইবার আক্রমন চালানো হয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের উপরে। মিথ্যা অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয় সংবাদ প্রচার মাধ্যম। ছাত্রলীগ সহ তাদের শেল্টারদাতাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেই সাইবার আক্রমন করে ফেইসবুক পেইজ হ্যাক করা, মুছে দেয়ার কাজ চালিয়ে যেত ছাত্রলীগ। এছাড়া নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলেই সেই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করা হতো। অথচ সংবাদের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা ব্যাখ্যা দেয়ার সাহস দেখাতে পারতো না তাদের কেউই। এ ছাড়াও সবচেয়ে বেশী ক্ষুব্ধ হতো শামীম ওসমানের শ্যালক ও অয়ন ওসমানের মামা তানভীর আহমেদ টিটুর অপকর্ম নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ হলেই কি পরিমাণ খড়গ নেমে আসতো গণমাধ্যম কর্মীদের উপর তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
আমলাপাড়ার সুজিত সাহার সার্বিক তত্বাবধানে পুরো জেলায় মাদকের রমরমা ব্যবসা চালালেও কেউ টু শব্দ করার সাহস করতো না । যেই সুজিত সরকার নূন আনতে পান্তা ফুরাতো সেই সুজিত সরকারের স্ত্রীর নামে শত কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে নগরীর সবচাইতে মূল্যবান এলাকা চাষাড়া আলুর মাঠের পপুলারের পারেশই। এ ছাড়াও রয়েছে দেশে অসংখ্য বাড়ি গাড়ি । ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালোয়শিয়ায় রয়েছে বহুতল বিলাশবহুল বাড়ি গাড়ি। একজন নিঃস্ব সুজিত সাহার যদি এতা সম্পদ থাকে তাহলে গডফাদারের গডফাদার তানভীর টিটু সম্পদের পরিমাণ কি হতে পারে ? এমন প্রশ্ন নগরবাসীর ।
সেই গডফাদারের গডফাদার তানভীর টিটু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে চালিয়েছেন ফিল্মসী স্টাইলে। অভিযোগ রযেছে তানভীর আহমেদ টিটু যে অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছিলো সেই সমস্ত অস্ত্র সরবরাহ করেছিলো সেই সময়ের পুলিশ সুপার শামীম ওসমানের পদলেহনকারী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা রাসেল ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ছাত্রলীগের অন্যতম টার্গেট ছিলো সাংবাদিক। ১৮ জুলাই এক ফটো সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করে ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়। ১৯ জুলাই ছাত্রলীগের মহড়ার ভিডিও ধারন করার অপরাধে একজন অনলাইনের সম্পাদককে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের গেটে লাঠিপেটা করে ভেতরে থাকা ক্যামেরাপার্সনদের ভিডিও ধারন না করতে হুমকি দিয়ে যায়।
ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্যতম হোতা শামীম ওসমান ঘৃণ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আধুনিক রূপকার । তিনি নিজ জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা নাজমা রহমান কে নাজেহাল করেছেন, আপন চাচী সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীর উপর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে নগ্ন হামলা করেছেন। এছাড়াও নিজ দলের নেত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলা চালিয়ে নগ্ন খেলায় নেতে উঠেছিলেন । এক অর্থে ওসমান পরিবার ও তাদের দালালদের কারনে নারায়ণগঞ্জবাসী ছিলো পুরোপুরি জিম্মি।
Discussion about this post