মানব সেবার নামে নারায়ণগঞ্জের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় একের পর এক অপকর্ম চালিয়েই যাচ্ছে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, এমএলএসএস থেকে শুরু করে এম্বুলেন্স ড্রাইভারদেরকে ম্যানেজ করে রোগী ভাগিয়ে এই অনুমোদনবিহীন হাসপাতালটি নগরবাসীর সাথে নগ্ন কর্মকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছে ।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কয়েকজন অসাধু চিহ্নিত কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে চলছে এই নগ্ন কর্মকান্ড। একই সাথে যে কোন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেই যে দালালের মাধ্যমে হাসপাতালে আসে তাকে প্রথমেই নগদ এক হাজার এবং আইসিইউ কিংবা সিসিইউতে ভর্তি হলে প্রতিদিন দালালীর একটি অংশ ওই দালালের বিকাশের একাউন্টে কিংবা নগদে চলে যাবে। এভাবেই দিনের পর দিন চলছে অনুমোদন বিহীন মেডিকেল কলেজ নামক এই হাসপাতালটি। চিকিৎসার নামে এই হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়তঃ চলছে অসুস্থ্যদের সাথে প্রতারণা ।
এমন অপরাধের সকল তথ্য জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ খুব ভালো ভাবে জানলেও ওই যে নিয়মিত মাসোয়ারা, সেই কারণে একেবারেই নিশ্চুপ থাকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নির্লজ্জ সদস্যরা ।
আর এই কারণেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে নবজাতক শিশুর নাকের পর্দা (নাকের দুই ফুটোর মাঝের অংশ) ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠার পরও রোগীর স্বজনদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার সাহস করে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
হাসপাতালটির নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ঘটে নবজাতক শিশুর নাকের পর্দা (নাকের দুই ফুটোর মাঝের অংশ) ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ।
শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নবজাতকের বাবা রাসেল সরকার সাংবাদিকদের কাছে এমন এমন অভিযোগ করেন ।
নবজাতকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২২ জুন রাসেল ও সোমা দম্পতির নবজাতক শিশুকে শ্বাসকষ্ট জনিত জটিলতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আসার পর ওই নবজাতকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন চিকিৎসক ডা. জাহিদুল হাসান।
লাইফ সাপোর্টে নবজাতকের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য চিকিৎসক সি-পাপ মেশিন লগানোর পরামর্শ দেন। সেই সি-পাপ মেশিন লাগানোর সময় নবজাতকের নাকের পর্দা ও নাকের জোড়া ছিঁড়ে যায়।
এ বিষয়ে নবজাতক শিশুটির বাবা রাসেল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাচ্চাকে এখানে আনার পর লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১ জুলাই বাচ্চাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে এনআইসিইউতে পাঠান চিকিৎসক জাহিদুল হাসান। বাচ্চার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে আমার স্ত্রী তাকে বুকের দুধ খাওযাতে গিয়ে দেখে তার নাকের পর্দা ছেড়া। অথচ সাত দিন গত হলেও চিকিৎসক কিংবা হাসপাতার কর্তৃপক্ষ কেউই আমাদের এই বিষয়ে জানায়নি। আজকে আমরা যখন চলে যাব সিদ্ধান্ত নেই তখন তারা এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না দিয়ে উল্টো আমাদের হাতে ছিয়াশি হাজার টাকার লম্বা বিল ধরিযে দিয়ে তা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন। পরে অবশ্য অবস্থা বেগতিক দেখে তারা বত্রিশ হাজার টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আমি ছাড় দিয়ে কি করবো? আমার বাচ্চার যে ক্ষতি হলো তারা সেটা ঠিক করে দিক।
এমন ঘটনায় বিষয়ে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রাশিদুল ইসলামের মাধ্যমে এনআইসিইউর দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে রাজি হননি। পরে তিনি আগামীকাল সরাসরি আসার অনুরোদ করেন।
এদিকে ডা. জাহিদুল হাসানের বরাতে হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রাশিদুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, আসলে বাচ্চটি খুব মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের এখানে এসেছিল। অপ্রাপ্ত বয়সে জন্ম ও শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতা ছিল। লাইফ সাপোর্টে ভর্তির সময় সি-পাপ মেশিন লাগানের সময় তার নাকের পর্দা ছিঁড়ে যায়। বাচ্চাদের শরীর অনেক বেশি নরম ও সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাটি হয়েছে। অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই এমনটি হয়। এটি সাধারণত ছয়মাস বয়স থেকে নিজে থেকেই পুনরায় জোড়া লেগে যায়। তবে এমনটি না হলে সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
নাকের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখা ও হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়ার বিষযে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আসলে বাচ্চাটির লাইফ সাপোর্টের রোগী ছিল। আমরা তাকে রিকভার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি বিধায় সে কিন্তু এখন অনেকটাই সুস্থ। বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে এমন নয়, হয়তো সঠিক সময়ে তাদের জানানো হয়নি। আমরা ওই নবজাতককে বাঁচানোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আর বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। আমরা নবজাতকের বাবার আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার বিল থেকে বত্রিশ হাজার টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়েছেন।
অসুস্থদের নিয়ে এমন অসংখ্য নগ্ন তামাশা ছাড়াও রাজনৈতিক নানা অপরাধের সাথে কোন কোন পরিচালক চিকিৎসক নেপথ্যে থেকে চালিয়ে চাচ্ছে দেশ বিরোধী কর্মকান্ড । এমন অভিযোগও রয়েছে এই হাসপাতালের পরিচালকদের বিরুদ্ধে।









Discussion about this post