সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে দামের দিক থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিল সব ধরনের সবজি। বলতে গেলে বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই ছিল না। আবার কখনো কখনো শশার মূল্য ১২০ টাাক কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে । বিক্রেতারা অভিযোগ জানিয়ে আসছিল রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বিষয়ে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোথাও নেই কোনো চাঁদাবাজি। সে কারণে বাজারে আগের চেয়ে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। তবে এখনও যেসব সবজির দাম বেশি সেটির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু কিছু সবজির এখন মৌসুম নেই, সে কারণে সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি।
আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা (ভালো মানের), মধ্যম মানের পটর ৩০ টাকা । একই হিসিবে ঢেঁড়স ২৫ থেকে ৫০ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৪০ টাকা, কচুর মুখি কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ২৫ থেকে ৫০/৬০ টাকা, লাল বেগুন ৫০/৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৫০/৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০, ধুন্দল ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা এবং আলু ৬০ টাকা।
অন্যদিকে মৌসুম না হওয়ার কারণে যেসব সবজির দাম বাড়তি সেই তালিকায় আছে টমেটো প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা এবং করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে এসে এক সরকারি চাকুরীজীবী সুচিত্রা সেন জানান, বাজারে আজ সবজির দাম আগের তুলনায় কিছুটা কম। মনে হচ্ছে সবজির দাম কমে আসতে শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি রয়ে গেছে। মাঝখানে কিছুদিন সবজির দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল, বলতে গেলে ৮০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজিই ছিল না। সেই তুলনায় আজকে বাজারে দেখা যাচ্ছে কিছুটা কমে আসতে শুরু করেছে সবজির দাম।
নগরীর দিগু বাবুর বাজার এলাকার একজন সবজি বিক্রেতা শাহজাহান বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম কমেছে। আগে থেকেই সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছিল তবে কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কারফিউ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি পরিবহন করা যাচ্ছিল না। সে সময় আরও বেড়ে গিয়েছিল সব ধরনের সবজির দাম। সেই তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে সবজির দাম। এছাড়া আরও একটি বড় কারণ হলো আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো, দোকান বসলে টাকা দিতে হতো, পিকআপে করে সবজি আনার সময় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ হতো। বর্তমানে সেই খরচটি নেই সে কারণে আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে আমরা সবজি বিক্রি করতে পারছি।
বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিষয়টি উল্লেখ করে দিগু বাবুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন, একটি ট্রাক যেখান থেকে প্রথমে সবজি নিয়ে আসে সেখান থেকে চাঁদা দেওয়া শুরু হতো, এরপর রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা নিতো। এরপর বঙ্গবন্ধু সড়কের ঢোকার পরে বিভিন্নভাবে আলাদা আলাদা জায়গায় চাঁদা দিতে হতো।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব মাল কেনার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যেতে তাদেরও বিভিন্নভাবে চাঁদা দিতে হতো। এরপর যেখানে সবজির ভ্যান গাড়ি অথবা দোকান বসে সেসব জায়গাতেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিদিন রাস্তা খরচ, লাইন ম্যান বাবদ টাকা নিতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে কিছুদিন ধরে এসব কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজিও করছে না। ফলে সব ধরনের সবজির দাম আগের তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে।
এমন ঘটনার পর এবার দিগুবাবুর বাজারের জায়গা দখল করতে বিএনপির নাম ব্যবহার করে দখলের নৈরাজ্য চালিয়ে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করছে অপরাধীরা । এদের দমন করতে না করা গেলে আবার বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে ।
Discussion about this post