অবৈধভাবে উপার্জিত বিশাল অর্থ মাফিয়া চক্র এই রূপগঞ্জে ঢেলে দিয়েছেন উদার হস্তা৷ এক সময়ের রাস্তায় বসে ডিম বিক্রেতা রফিক ওরফে আন্ডা রফিক ওরফে আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামের মতো রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন আড়ংয়ের সেলসম্যান নীলা। এমন অসংখ্য রফিক ও নীলাদের মতো উচ্চমানের অপরাধীদের হাতে জিম্মি রয়েছে রূপগঞ্জ ।
এমন অপরাধীদের অংসখ্য সংবাদের পর এবার সেই র্যাবের সাত খুনের মূল অপরাধী কর্ণেল জিয়াউল আহসান ও আন্ডা রফিকের ঘুষ কেলেংকারীর চিত্র তুলে এনেছেন কালের কন্ঠ।
যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো :
অনুসন্ধানে পাওয়া নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এনটিএমসির সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নাবালিকা মেয়ে তাসফিয়া আহসান জইতার নামে একাধিক দলিলে কেনা হয়েছে বাগানবাড়ির পুরো জমি।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাসফিয়া আহসান জইতার নামে বাগানবাড়ির ০.৬৬৭ একর জমি রেজিস্ট্রি হয়, যার দলিল নম্বর ১০৯০। দলিলে মূল্য দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বরুনা মৌজায় ০.২৩৭ একর, নাওড়া মৌজায় ০.১৭ একর ও বসুলিয়া মৌজায় ০.২৬ একর জমি রয়েছে। এই জমিতেও আমমোক্তার ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রফিকের ছেলে কাওসার আহম্মেদ অপু। জমিটি কেনা হয় মো. হোসেন আলী, হাশেম আলীসহ মোট ১৮ জনের কাছ থেকে। যথারীতি এখানেও মেয়ের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন জিয়াউল আহসান।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানায়, এক প্লটে বিশাল আকৃতির বাগানবাড়ি নির্মাণের জন্য ধাপে ধাপে লাগোয়া জমিগুলোও কেনেন রফিকুল ইসলাম।
জিয়াউল আহসানকে উপহার দিতেই তিনি জমিগুলোর মালিকদের সঙ্গে দেনদরবার করে বিক্রি করতে বাধ্য করেন। কেউ জমি বিক্রিতে রাজি না হলে জিয়াউল আহসানের নাম ব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করার হুমকি দিয়ে জমি বিক্রিতে বাধ্য করেছেন রফিকুল ইসলাম।
শত কোটি টাকা মূল্যের এই বাগানবাড়ির জমি কোনো টাকা না নিয়েই জিয়াউল আহসানের শিশুকন্যার নামে কেনেন রফিকুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানায়, জিয়াউল আহসানকে এই বাগানবাড়িটি দিয়ে রফিকুল ইসলাম এলাকার সাধারণ মানুষের ভূমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। তা না হলে জিয়াউল আহসানকে দিয়ে তাদের তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। মূলত রফিকুল ইসলাম এই বাগানবাড়িটি উপহার দিয়েছেন তার দখলদারি নির্বিঘ্নে করার জন্য। জিয়াউল আহসানের বাগানবাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এলাকাবাসী সেখানে হামলা চালিয়ে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মালপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। তার গ্রেফতারের পর থেকে বাগানবাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্র ও হকার নিহতের মামলায় ইন্ধনদাতা হিসেবে ৭ আগস্ট রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৬ আগস্ট সিএমএম কোর্টে হাজির করা হলে আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জিয়াউল আহসানের জন্ম ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর, ঝলকাঠি জেলায়। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও স্কাইডাইভার। জিয়াউল আহসান সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র্যাব, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থা, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) দায়িত্ব পালন করেছেন।
Discussion about this post