নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিগত ২০০৯ সালে ৫ জানুয়ারী থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত কি পরিমাণ অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে তার হিসাব করা খুবই কঠিন। কোথায় কোথায় ছিলো ওসমান পরিবারের সদস্যদের ও তাদের চেলা চামচাদের দৌড়াত্ম তার চাঞ্চল্যকর তথ্য সকলের নজরে থাকলেও কেউ যেন কোন কথাই বলতে পারতো না। আর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে যারা কাজ করবে তাদের নানাভাবে হয়রানী করার চিত্রও ছিলো একেবারে ই দিনের মতো পরিস্কার।
আর নগরীতে ওসমান পরিবার ও তাদের চেলা চামচাদের টর্চার সেল কতটা যে ছিলো তা ওই আয়নাঘরের মতো যারা ই ওই টর্চার সেলে যেতে হয়েছে, তারাই খুব ভালো করে বলতে পারবেন।
এক কথায় ওসমান পরিবারের কর্মকান্ড ছিলো রাম রাজত্বের মতো।
ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে কোন কিছু করার সাহস ছিলো না কারোর ই। যেমন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ২০১৭ সালের ১৩ মে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হলেও বিচার তো হয় ই নাই শেষ পর্যন্ত চুপসে গেছে সেই শিক্ষক। এখনো সেই শ্যামল কান্তি ভক্তের কোন হদিস নাই ।
একই পন্থায় গত বছর রোজার মধ্যে একজন রোজদার বৃদ্ধকে দাঁড়ি টেনে ছিড়ে এবং টুপী মাথা থেকে ফেলে নগ্ন কায়দায় কালীর বাজারের দেলোয়ার টাওয়ারের সামনে মারধর করে নগরীর কুখ্যাত অপরাধী নানা অপরাধের হোতা তানভীর আহমেদ টিটুর অসংখ্য অপকর্মের সহযোগী বিপ্লব কুমার সাহা। ওই ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হলেও কেউ টিটুর ভয়ে সংবাদ প্রকাশ করাও সাহস করে নাই ।
এমনি ভাবেই নগরীর হাট, ঘাট, মাঠ, ভূমি, পরিবহণ, ক্লাবের নামে নানা নগ্নতা, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ. এলজিইডি, বিটিআরসি, তুলা, সূতা, গম, সর্বত্র চাঁদাবাজিসহ সকল সেক্টরের আধিপত্য বিস্তার করে নাারয়ণগঞ্জ থেকে হাজার হাজচার কোটি টাকা লুটপাট করে একেক জন যেন আঙ্গুল ফুলে করাগাছ বনে গেছেন । সেই অপরাধীদের অনেকেই এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হতাহত ও গুলিবর্ষন মামলার আসামী।
অপরাধীদের গডফাদার শামীম ওসমান তার শ্যালক মাদকসহ সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের মূল হোতা মাষ্টারমাইন্ডার তানভীর আহমেদ টিটু, শামীম ওসমানের আরেক ভাই সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিকেএমইএ এর দীর্ঘদিনের দখলকারী ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের পুত্র আরেক অপরাধী দখলদারদের মূল হোতা অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে এখন চলছে নানা দৌড়ঝাঁপ।
ওসমান পরিবারের অবৈধ অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে একদিকে বিএনপির অসাধু চক্র কে ম্যানেজ করতে প্রতিনিয়তঃ মুঠোফোনে যোগাযোগহ করে কোটি কোটি টাকায় ম্যানেজ করছে । আবার ওসমান পরিবারের সাঙ্গপাঙ্গদের নামে মামলা ও তাদের সাম্রাজ্য অটুট রাখতে কোটি কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে অসাধু চক্র।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর অনেকের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওসমান পরিবারের রাঘববোয়লরা পালিয়ে গেলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এখনো রয়েছে প্রকাশ্যে । একদিকে প্রশাসনের অসাধু চক্র অপরদিকে রাজনৈতিক কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করেই অসংখ্য মামলার আসামী হয়েও এখনো রয়েছেন অপরাধীরা প্রকাশ্যে।
বিশেষ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হাফেজ সোলাইমানের বড় ভাই মোঃ শামীম কবির বাদী হয়ে যে মামলঅ দায়ের হয়েছে সেই মামলায় রাঘববোয়ালদের অনেকেই ওসমান পরিবারের অন্যতম সহযোগী। যাদের অনেকেই রাতারাতি আঙ্গল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। তারাই এখন এই মামলা থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হাফেজ সোলাইমান (১৯) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দিপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেই সাথে ১০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য আওয়ামীলীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, পিন্ডল শটগান, ককটেল, লাঠিসোঠা, ইটপাটকেল, রামদা, বাঁশ ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে যেআইনী জনতাবন্ধে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নন সৃষ্টি করে এবং জনমনে আতংক তৈরী করেন। হাফেজ সোলাইমান (১৯) ঐদিন আনুমানিক দুপুর দেড়টার সময় যাত্রাবাড়ী থানাধীন যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার উপর পৌছালে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া গুলিতে হাফেজ সোলাইমান এর ডানপাশের রানে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। অজ্ঞাতনানা পথচারিদের সহায়তায় তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথি মধ্যে আনুমানিক সাড়ে চারটার সময় সে মৃত্যুবরণ করে।
মামলায় নামীয় আসামিরা হলেন :
১। শেখ হাসিনা (৭৭) (সাবেক প্রধানমন্ত্রী), পিতা- মৃত শেখ মুজিবর রহমান, সাং-ধানমন্ডি ৩২. খানা-ধানমন্ডি, জেলা- ঢাকা,
২। আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল (৭৩) (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), পিতা- আশরাফ আলী খান, সাং-মনিপুরি পাড়া, থানা তেজগাঁও, জেলা- ঢাকা,
৩। ওবায়দুল কাদের (সাবেক সেতুমন্ত্রী),
৪। এ্যাডঃ আনিসুল হক (৬৫), (সাবেক আইনমন্ত্রী। পিতা- সিরাজুল ইসলাম, সাং-পানিয়ারূপ, থানা- কসবা, জেলা- বি-বাড়িয়া,
৫। ডাক্তার দিপু মনি (৬২), (সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) পিতা এম এ ওয়াদুদ, সাং-কামরাঙ্গা গ্রাম, থানা- চাঁদপুর সদর, জেলা- চাঁদপুর,
৬। জুনায়েদ আহমেদ পলক (৪৪), (সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী) এত্য ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, সাং- অজ্ঞাত, ধানা- সিংরা, জেলা- নাটোর,
৭। এ.কে.এম শামিম ওসমান (৬৪) পিতা-মৃত এ.কে.এম শামসুজ্জোহা, সাং- ১৯ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, পূর্ব চাষাড়া, থানা- নারায়ণগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ,
৮। আব্দুল করিম ডিস (বাবু) (৫৫), পিতা- আব্দুল গফুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৭নং ওয়ার্ড, আমিন মঞ্জিল,
৯। গম জসীম (৬০), ‘পিতা- অজ্ঞাত, পাইকপাড়া, ছোট কবরস্থান,
১০। টুন্ডা খোকন (৪৫), পিতা- মৃত আলাউদ্দিন, লামাপাড়া ওয়ার্ড নং-১৭.
১১। আক্তারুজ্জামান (৫০), পিতা-আইছ আলী মাদবর, ডিক্রীরচর, আলীর টেক, সদর, নারায়ণগঞ্জ,
১২। সায়েম (৪২), পিতা- ফালান মেম্বার, কুড়েরপাড়, সদর, আলীরটেক,
১৩। মেহেদী (৪৮), পিতা- আফিলউদ্দিন মাদবর, সিদ্ধিরগঞ্জ, বার মাষ্টাইল,
১৪। বিপ্লব কুমার সাহা(৪৭), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-৫৩/১ এসএম মালেক জেড, টানবাজার, ধানা-নারায়নগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
১৫। হাবীবুল্লাহ কাচপুরী, পিতা- অজ্ঞাত, সিদ্ধিরগঞ্জ,
১৬। মাছুম পারভেজ (৪২), পিতা সাইজউদ্দিন মাদবর, গোদনাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ,
১৭। সিরাজ মন্ডল, পিতা মৃত লাল মিয়া, গোদনাইল, এস ও সাবেক কমিশনার NCC,
১৮। মোঃ ফাহাদ হোসেন ফারুক, পিতা- মৃত আব্দুল হামিদ, নয়াপাড়া, কদমতলী, ৭নং ওয়ার্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ,
১৯। মোঃ শাহিন মেম্বার সাবেক ২নং ওয়ার্ড (৫০), পিতা- সৈয়দ হোসেন, আলীরটেক, সদর, নারায়ণগঞ্জ,
২০। আমান উল্লাহ মেম্বার (৬২), পিতা- শিরি মিয়া, আলীরটেক সদর, নারায়ণগঞ্জ,
২১। মোঃ দিদার সুলতান, পিতা আমান উল্লাহ মেম্বার, আলীরটেক সদর, নারায়ণগঞ্জ,
২২। মোঃ আসিফুদ্দিন আহমেদ, পিতা-মৃত হেলাল উদ্দিন, সাং-১০/এ ইন্দিরা রোড থানা-তেজগাঁও, ঢাকা,
২৩। শরিফুল হক সাদেকী পিতা-মৃত সাদেকুল ইসলাম সরদার, ধানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
২৪। এসএম রানা,না:গঞ্জ ক্লাবের সহ-সভাপতি, নলুয়াপাড়া,
২৫। লিটন সাহা, পিতা-হরিপদ সাহা, সাং-আমলাপাড়া, ধানা- ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
২৬। রামু সাহা, পিতা-হরিপদ সাহা, সাং-আমলাপাড়া, ধানা-ফতুল্লা, জেলা- । নারায়নগঞ্জ,
২৭। কাউছার আহম্মেদ, ছাত্রলীগ নেতা নলুয়াপাড়া, সাং-অজ্ঞাত, ধানা-ফতুল্লা জেলা-নারায়নগঞ্জ,
২৮। সুজিত সাহা, পিতা-সুরেশ সাহা, সাং-আমলাপাড়া, থানা-নারায়নগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
২৯। ইব্রাহিম চেঙ্গিস, পিতা-মহিউদ্দিন ইসদাইর সাং-অজ্ঞাত, ধান্য-ফতুল্লা জেলা-নারায়নগঞ্জ,
৩০। অনুপ কুমার সাহা, পিতা-রাজেন্দ্র সাহা, উত্তর চাষাড়া, থানা-ফতুল্লা জেলা-নারায়গঞ্জ,
৩১। মাসুদ আহমেদ চৌধুরী পিতা- মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সাং-অজ্ঞাত, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
৩২। ফজর আলী, গোগনগর ইউপি চেয়ারম্যান, থানা-নারায়নগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়নগঞ্জ,
৩৩। শওকত আলী চেয়ারম্যান বক্তাবলী, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ,৩৪। ইয়ানবী (৩৮), পিতা সালাউদ্দিন হাজী, সাং-মন্ডলের গাও, থানা-সোনারগাঁও জেলা- নারায়নগঞ্জ
Discussion about this post